ডোনাল্ড ট্রাম্প: জীবন, কর্ম ও বিতর্কের গল্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনকে ঘিরে অনেক তথ্য এবং ঘটনা রয়েছে যা তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতা থেকে শুরু করে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ব্যক্তিগত জীবনের অনেক দিককে উন্মোচন করে। ট্রাম্প একজন সফল ব্যবসায়ী এবং টিভি ব্যক্তিত্ব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া পর্যন্ত অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছেন। এখানে তাঁর জীবন ও কর্মের একটি বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
পারিবারিক জীবন
ডোনাল্ড জন ট্রাম্পের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৬ সালে, নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স অঞ্চলে। তাঁর বাবা, ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন একজন বড় মাপের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, যিনি মূলত সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্প তৈরি করতেন। ট্রাম্পের মা, মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ছিলেন স্কটল্যান্ড থেকে আগত একজন অভিবাসী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন ডোনাল্ড। বড় ভাই ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়রের অকাল মৃত্যু তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং তিনি নিজে কখনো মদ্যপান না করার শপথ নেন।
শিক্ষা জীবন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শৈশব থেকেই শিক্ষা জীবনে বিভিন্ন ধরনের শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ছিল, যার কারণে তাঁর বাবা তাকে নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে পাঠান। সেখান থেকে সফলভাবে গ্র্যাজুয়েশন করার পর তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। হোয়ার্টন স্কুলে ব্যবসায়িক শিক্ষার মাধ্যমে তিনি পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার
পড়াশোনা শেষে ট্রাম্প তাঁর বাবার ব্যবসায় যোগ দেন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির বেশ কয়েকটি স্থানে আবাসন প্রকল্প শুরু করেন। পরে ম্যানহাটনে "ট্রাম্প টাওয়ার" নির্মাণের মাধ্যমে তিনি রিয়েল এস্টেট খাতে একটি বিশাল সাফল্য লাভ করেন। তার মালিকানাধীন গলফ কোর্স, হোটেল এবং রিসর্টগুলোর মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন অন্যতম বড় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে তাঁর ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার ছিল নানা উত্থান-পতনে ভরপুর। বেশ কয়েকবার দেউলিয়াত্বের সম্মুখীন হন তিনি, এবং তাঁর কোম্পানি গুলোর মধ্যে কিছু বিভিন্ন আইনগত সমস্যায় পড়ে। তা সত্ত্বেও, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম বিতর্কিত এবং পরিচিত ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পান।
ব্যক্তিগত জীবন
ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন এবং পাঁচ সন্তানের বাবা। প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প ছিলেন একজন চেকোস্লোভাকিয়ান মডেল ও অ্যাথলেট। তাঁদের তিন সন্তান - ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভানকা, এবং এরিক ট্রাম্প। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা মাপলসের সাথে তাঁর একটি কন্যা রয়েছে - টিফানি ট্রাম্প। ২০০৫ সালে তিনি মেলানিয়া কনৌসকে বিয়ে করেন, যিনি একজন স্লোভেনিয়ান মডেল। তাঁদের একটি ছেলে রয়েছে - ব্যারন ট্রাম্প।
টিভি ক্যারিয়ার
ব্যবসার পাশাপাশি ট্রাম্প 'দ্য অ্যাপ্রেন্টিস' নামে একটি টিভি শো চালু করেন, যা খুবই জনপ্রিয় হয়। এই শো-এর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং তার "ইউ আর ফায়ার্ড" শব্দটি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করে।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং বিতর্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়ী হন। তাঁর প্রেসিডেন্সি আমেরিকার রাজনীতিতে অনেকটা বিপ্লব সৃষ্টি করে। তাঁর সময়ে ইমিগ্রেশন নীতি কঠোর করা, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা, এবং মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত নীতির বিপরীত ছিল। এছাড়াও COVID-19 মহামারীর সময় তাঁর পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তাঁর প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছিল।
বিতর্কিত মন্তব্য এবং কাজ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও কার্যক্রম তাঁকে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। যেমন, নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা, এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ছিল কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাঁর সমর্থকদের উস্কানি দিয়ে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার সূচনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কালিমা লেপন করেছে।
বিশেষ অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতির কারণে তিনি সমর্থকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। তবে তাঁর প্রশাসনের সময় অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ ছিল। তাঁর উদ্যোগে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতা পেলেও পরে অনেক বিতর্ক ও আইনি সমস্যার সম্মুখীন হন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবন যেমন বর্ণাঢ্য, তেমনি বিতর্কে ভরপুর। মার্কিন ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি পরপর দুটি অভিশংসনের সম্মুখীন হন এবং তাঁর কর্মজীবনে নানা বিতর্ক ও রহস্য রয়ে গেছে যা আজও বিশ্ববাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন